রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০২ অপরাহ্ন

বহুল দেখা নাইরলি হাঁস

  • আপডেট সময়: শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮
  • ৮১৭ বার

সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের গোলাবাড়ি গ্রাম। সেখানকার হাওর বিলাস হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নৌকাযোগে ছুটলাম টাঙ্গুয়ার হাওরের রউয়া বিলের দিকে। খানিকটা এগোনোর পর দেখলাম, একটি মাইজলা বক মাছের জন্য স্থির দৃষ্টিতে পানিতে তাকিয়ে আছে। দুর্লভ সেই বকটির ছবি তোলার সময় ওর প্রায় ১০ মিটার পেছনে তিনটি হাঁস ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়ল। নৌকা কাছাকাছি যেতেই ওরা উড়ে গেল। আরেকটু পর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আরও ১৫-২০টি হাঁসের দেখা মিলল।

রউয়া বিল থেকে চটাইন্না খাল দিয়ে উত্তর-পশ্চিমের চটাইন্না বিলে গিয়ে একটি কান্দায় (উঁচু জায়গা) নামলাম। এটি পার হয়ে সামনে যেতেই হঠাৎ রউয়া বিলে দেখা সেই হাঁসের বিশাল একটি ঝাঁক উড়াল দিল।

টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা হাঁসগুলো পরিযায়ী পাখি নাইরলি হাঁস। জিরিয়া হাঁস, ইটাপেরি হাঁস বা গাঙ রৈব নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম গারগেনি (Garganey) বা ব্লু-উইঙ্গড টিল (Blue-winged Teal)।

নাইরলি হাঁসের গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম। প্রজননকালে হাঁসা, হাঁসির পালকের রঙে পার্থক্য দেখা যায়। হাঁসার গাঢ় বাদামি মাথার চাঁদি হয় কালো। চোখের ওপর থাকে সাদা চওড়া ভ্রুরেখা। মুখ ও ঘাড়-গলা হয় গাঢ় বাদামি। পিঠ, পেটের নিম্নাংশ ও লেজের তলা বাদামি এবং তাতে থাকে কালো কালো বুটি। সাদাটে পেটের দুপাশে ছোট ছোট রুপালি দাগ। ডানার ওপরটা ধূসর।

হাঁসির পালক বাদামি ও তাতে গাঢ় বুটির মতো থাকে। কিন্তু ভ্রুরেখা অস্পষ্ট। হাঁসা-হাঁসি নির্বিশেষে চোখ ঘন বাদামি ও চঞ্চু কালচে-বাদামি। প্রজনন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় হাঁসা ও হাঁসি দেখতে একই রকম, শুধু ডানার পালকে কিছুটা পার্থক্য থাকে।

নাইরলি হাঁস বহুল দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। মাঝারি থেকে বড় দলে বিচরণ করে। জলজ উদ্ভিদের বিচি, পাতা প্রিয় খাবার। তবে কদাচিৎ কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট এবং খোলকি প্রাণী, যেমন চিংড়ি ও কাঁকড়া ইত্যাদি খায়।

নাইরলি হাঁসের প্রজননকাল এপ্রিল-মে। এ সময় এরা মূল আবাস ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে মাটিতে তৃণলতার ওপর বাসা বানায়। হালকা পীতাভ রঙের ৮-১২টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২১-২৩ দিনে। বাচ্চাদের পালক গজায় ৩৫-৪৯ দিনে। এরপর নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে তারা। এদের আয়ুষ্কাল ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ